পলাশ ফুল
প্রকৃতিতে পলাশ ফুলের এই শোভা বর্ধন বসন্ত ঋতুর আগমনের ইঙ্গিত বহন করে। পলাশ ,শিমুল,কৃষ্ণচুড়া , রাধাচুড়া প্রকৃতিকে রাঙ্গিয়ে দিয়ে বসন্তের বারতা ছড়িয়ে দেয় । আমাদের মত আর কোন রাজ্যে ছয়টি ঋতুর উপস্থিতি এত ভালভাবে বোঝা যায় না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংর কারনে যদিও ঋতু গুলি অনেকটাই ওলট পালোট হয়েছে কিন্তু এইবছরের প্রলম্বিত শীতের পর, বসন্তের আগমন বেশ বোজা যাচ্ছে। প্রকৃতিও তার সব সম্ভার দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে এই বসন্তে। তার আগমনি কোকিল সারাদিন কুহু কুহু রবে জানিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই কংক্রীটের জঙ্গলেও প্রকৃতি তার পলাশ ও শিমুল দিয়ে দিকে দিকে আগুনের রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে।
প্রকৃতির এই রঙের খেলায় একটি স্মৃতি আমার মনে উঁকি দিচ্ছে । আমার বাড়ির সামনে একটা কৃষ্ণচুড়া গাছ এমনি করেই প্রতিবছর বসন্তে নিজেকে সাজিয়ে তুলতো। সারা অঙ্গে আগুন দিয়ে সাজিয়ে শাখা প্রশাখা আন্দোলিত করে হয়ত আমায় তার অঙ্গের রুপ আমাকে দেখিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করত। কিন্তু আমাদের এই শহরের সংস্কৃতিতে তার এই সৌন্দর্যের কোন মুল্য নেই। পুরসভার লোকেরা একটু একটু করে TRIM করার নামে, তাকে প্রায় 'খুন' করে ফেলল। এই পুর্নবয়স্ক পুর্নযৌবনা গাছটির একটাই আপরাধ ছিল, সে পুরসভার একটি বিজ্ঞাপন আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই বিজ্ঞাপনটি দৃশ্যগোচরে আনার জন্য তার অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো নির্দয়ভাবে ছেঁটে ফেলা হল। সেই থেকে সে জীবন্মৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রকৃতির নিয়মে সে মনের আনন্দে বসন্ত কালে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে শভা বর্ধন করত এবং ছায়াদিয়ে ঘিরে রাখত অনেকখানি জায়গা। সেই ছায়াতে পথ চলতি অনেকেই বিশ্রাম নিত এবং কিছু মটোর গাড়ী তার ছায়ায় রাখা যেত। তাছাড়াও সে বীনা স্বার্থে বাতাসের কার্বন ডাইওক্সাইড শুষে নিয়ে ,বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিয়ে আমাদের সাহায্য করত। এই উপকারী গাছটিকে বিনা অপরাধে পুরসভা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। তার অঙ্গপ্রতঙ্গ ছেঁটে যৌবনেই বার্ধক্যে পৌছে দিয়েছে। এখন আর ফুল ফোটে না, সে রুপও নেই। কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে। সে আর ছায়া দিতে পারে না। যৌবনে তার রুপ দেখেছি, তাই এখন তাকে দেখলে কষ্ট হয়, মায়া হয়। জীবন আছে কিন্তু কথা বলতে পারে না। এদের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। আজ যখন সারা বিশ্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিংর জন্য সবুজায়নের জন্য এবং Deforestation'র বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে তখন আমাদের বিধান নগর ও কলকাতার পুরসভা গুলি বীপরীত মুখে হাঁটছে। এঁরা বিজ্ঞাপন দাতাদের বৃক্ষনিধনের পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়ে বসেছেন। সল্টলেকের ব্রডওয়ের দু পাসে এবং মাঝখানের সারিতে প্রচুর বড় বড় গাছ নীধন করা হয়েছে। তার চিহ্ন মাটিতে এখনো বর্তমান।
এককালে গাছগলো পুরসভাই লাগিয়েছিল রাস্তার শোভা বর্ধন এবং সবুজায়নের জন্য। সেই পুরসভাই দুটো পয়সার জন্য আজ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে নষ্ট করে চলেছে।
সেই কৃষ্ণচুড়া গাছ, তার বাঁ পাশে রাধাচুড়া এবং ডানপাশে লাইটপোষ্টে লটকানো বিজ্ঞাপনটি। এই ছট্টো বিজ্ঞাপনটি আড়াল করাটাই তার ছিল আপরাধ। ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে কি নিষ্ঠূরভাবে তার অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন