পৃষ্ঠাসমূহ / Pages

প্রসঙ্গ : রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবী

রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরী দেবীর ৫ই জুলাই ১৮৬৮ সালে বিয়ে হয়। তখন  কাদম্বরী দেবীর বয়স ৯ বছর। কাদম্বরী দেবীর আসল নাম ছিল মাতঙ্গিনি গঙ্গোপাধ্যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন  বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি তাঁর নানা কর্মকান্ডে জড়িত থাকার ফলে কাদম্বরী তাঁকে খুব একটা কাছে পেতেন না। তিনি কাদম্বরী দেবীকে সঙ্গ দিতে না পারলেও  তিনি তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।  জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আধুনিক মনষ্কা ব্যাক্তি। তিনি কাদম্বরী দেবীর শিক্ষার সাথে সাথে তখনকার দিনে খোলা মাঠে তাঁকে ঘোড়ায় চড়া শেখানোর ব্যাবস্থাও করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন যে জ্যোতি দাদা ও বৌঠান  চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গঙ্গার ধারে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন।

কাদম্বরী দেবীর বিয়ের সময় রবির বয়স ছিল ৭ বছর ও কাদম্বরীর ৯ বছর অর্থাৎ দুজনে প্রায় সমবয়সী ছিলেন এবং সেই কারনেই কাদম্বরী দেবীর  খেলার সাথী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন : "He had been her playmate and companion ever since her marriage."  কাদম্বরী দেবী স্বামীকে খুব একটা কাছে পেতেন না ,  তিনি ছিলেন উপেক্ষিতা এবং একাকি। এমত অবস্থায় রবীন্দ্রনাথই ছিল তাঁর সঙ্গী।
রবীন্দ্রনাথের ২২ বছর বয়সে হটাৎ এবং অপ্রত্যাশিত ভাবেই বিয়ে হয় ১১ বছর বয়সী ভবতারিনি দেবীর সাথে, ৯ই ডিসেম্বর ১৮৮৩ সালে। (In the words of biographer Mukhopadhyay, Tagore's marriage at the end of 1883 had been "sudden and unexpected.") জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন "কারোয়ার হইতে ফিরিয়া আসার কিছুকাল পরে ১২৯০ সালে ২৪ শে  অগ্রহায়ণে আমার বিবাহ হয়, তখন আমার বয়স বাইশ বৎসর।" পরে ভবতারিনি দেবীর নাম বদলে মৃনালিনি রাখা হয়।  তাঁর বিয়ের  চারমাস কয়েকদিন পরে, কাদম্বরী দেবী ১৯ এপ্রিল ১৮৮৪ সালে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার কারন জানা থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি। Biographer Mukhopadhyay writes of Kadambari Devi's death: "The reasons are shrouded in mystery. But that there was some family misunderstanding, it cannot be doubted."
কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু কবির মনে গভীর শোকের ছায়া রেখে যান। রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষাতেই তা চিঠি , গান বা কবিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে পরোক্ষভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাই কবির অনেক গানে ও কবিতায় কাদম্বরী দেবীর উপস্তিতি দেখতে পাই। জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন - "কিন্তু আমার ২৪ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিছয় হইল তাহা স্থায়ী পরিছয়। তাহা তাহার পরবর্তী  প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে। শিশুবয়সের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটা ছুটিয়া যায়, কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই। তাই সেদিনকার সমস্ত দুঃসহ আঘাত বুক পাতিয়া লইতে হইয়াছিল।" তাঁর একটি চিঠি থেকে বোঝা যায় তাঁর শোক কতটা গভীর ছিল। কবি অমিয় চক্রবর্ত্তীকে (পরবর্ত্তীকালে ইনি কবির সাহিত্য সহায়ক হয়েছিলেন) লিখেছিলেন - " আমি তোমারই বয়সে, তোমার মতো  আমার জীবনেও  এক গভীর শোক নেমে এসেছিলো। আমার এক অতি নিকট আত্মীয়া আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি ছিলেন আমার  জীবনের, সেই বাল্যকাল থেকে, এক সম্পুর্ন অবলম্বন। তাঁর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে মনে হয়েছিল যেন আমার পায়ের নীচের মাটি সরে গেছে, আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আমার পৃথিবী শুন্যে পরিনত হয়েছে , আমার জীবনের মধুর স্বাদ জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে।"  বাংলায় অনুবাদ করে এই দাঁড়ায় ।
কবি তাঁর জীবন স্মৃতিতে লিখেছেন -  ছোটবেলায়  মাকে হারানোর  শোক  তিনি ততোটা বুঝতে পারেননি , কারন কাদম্বরী দেবী মায়ের অভাবটা বুঝতে দেন নি। যদিও কাদম্বরী তখন তাঁরই বয়সী এবং খেলার সঙ্গী।
অনেক কবিতা ও গানে তাঁর ছায়া দেখা যায়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর চার বছর পর কবি  "তবু মনে রেখো -- " গানটি লেখেন। এটা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখেন এতে কোন সন্দেহ নেই।  গানটি বুঝতে হলে, গানটি কাদম্বরী দেবীর মুখে বসিয়ে পড়তে বা শুনতে হবে। 


  " তবু    মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি    পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।
             যদি   থাকি কাছাকাছি,
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি ---
                      তবু     মনে রেখো ।।
       যদি জল আসে আঁখিপাতে,
 এক দিন যদি খেলা থেমে যায় মধুরাতে,
                     তবু     মনে রেখো ।
এক দিন যদি বাধা পড়ে কাজে শারদ প্রাতে - মনে রেখো ।।
                   যদি       পড়িয়া মনে
 ছলোছলো জল নাই দেখা দেয় নয়নকোণে --
                   তবু    মনে রেখো ।। "


সৌজন্যে  youtube "Supe2U" channel


প্রথম শোক (FIRST SORROW)
কবি এই কবিতাটি কাদম্বরির মৃত্যুর ৩০ বছরেরও বেশি পরে লেখেন।

বনের ছায়াতে যে পথটি সে আজ ঘাসে ঢাকা ।
সেই নির্জনে হটাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠলো,
" আমাকে চিনতে পার না?"
আমি ফিরে তার মুখের দিকে তাকালেম।
বললেম, " মনে পড়ছে, কিন্তু ঠিক নাম করতে পারছি না।"
সে বললে,  "আমি তোমার সেই অনেক কালের,
সেই পঁচিশ বছর বয়সের শোক।"
তার চোখের কোনে একটু ছল্‌ছলে আভা দেখা দিলে,
যেন দিঘির জলে চাঁদের রেখা।
অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেম ।
বললেম  " সেদিন তোমাকে শ্রাবনের মেঘের মতো কালো দেখেছি,
আজ যে দেখি আশ্বিনের সোনার প্রতিমা।
সেদিনকার সব চোখের জল কি হারিয়ে ফেলেছ।"
কোনো কথাটি না বলে সে একটু হাসলে;
বুঝলেম সবটুকু রয়ে গেছে ওই হাসিতে।
বর্ষার মেঘ শরতে শিউলিফুলের হাসি শিখে নিয়েছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলেম," আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবনকে  কি আজও  তোমার কাছে রেখে দিয়েছ ।"
সে বললে - "এই দেখো-না আমার গলার হার। "
দেখলেম, সেদিনকার বসন্তের মালার একটি পাপড়িও খসেনি।
আমি বললেম, " আমার আর তো সব জীর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু তোমার গলায় আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবন  আজও ত ম্লান হয়নি।"
আস্তে আস্তে সেই মালাটি নিয়ে সে আমার গলায় পরিয়ে দিলে।
বললে " মনে আছে? সেদিন বলেছিলে তুমি সান্ত্বনা চাও না, তুমি শোককেই চাও।"
লজ্জিত হয়ে বললেম "বলেছিলেম । কিন্তু তারপর অনেকদিন হয়ে গেল, তারপরে কখন ভুলে গেলেম।"
সে বললে "যে অন্তর্যামীর বর, তিনিতো ভোলেননি। আমি সেই অবধি ছায়া-তলে গোপনে বসে আছি। আমাকে বরন করে নাও।"
আমি তার হাতখানি আমার হাতে তুলে নিয়ে বললেম, " একি তোমার অপরূপ মুর্তি। "
সে বললে,  " যা ছিল শোক, আজ তাই হয়েছে শান্তি।"
  <<<<>>>>

সত্যাজিৎ রায়  রবীন্দ্রনাথের "নষ্টনীড়" গল্পটিকে  "চারুলতা" সিনেমায় রূপান্তরিত করার আগে  রীতিমতো Research করেছিলেন বলেই শোনা যায়। এটাই স্বাভাবিক, কারন তিনি সত্যজিৎ রায়। গল্পের চারুলতাই বাস্তবের কাদম্বরী।  Marie Seton, তার লেখা  (1971 )  'Portrait of a Director : Satyajit Ray' বইয়ে লেখেন -  Ray, when he was doing research on Tagore during the later 1950s in preparation for turning "The Fouled Nest" into film, came across, as Seton puts it, "Tagore's marginal notations linking the name of Rabindranath's sister-in-law . . . with that of Charu, the novel's central character." সত্যজিৎ "নষ্টনীড়" পান্ডুলিপির মার্জিনে কাদম্বরী দেবীর Notation  বা  স্কেচ দেখতে পান যা থেকে অনুমান করা  যায় যে গল্পের চারুলতা বাস্তবের কাদম্বরী দেবীরই প্রতিফলন। কবি তাদেরই গল্প লিখেছেন "নষ্টনীড়" উপন্যাসে।

Andrew Robinson, in his 1989 book called 'Satyajit Ray : The Inner Eye', reiterates Seton's finding and elaborates, stating that Ray had seen "a very early manuscript of Nastanirh with marginalia which refer many times to Hecate", Tagore's nickname, we are told, for Kadambari Devi.
"নষ্টনীড়" গল্পটি লেখার সময়ও কবির মাথায় কাদম্বরী দেবী ছিলেন তাইতো পান্ডুলিপির মার্জিনে কখনো দেখা যায়  কাদম্বরীর ডাকনাম "হেকাটি" (গ্রীক দেবতা) কখনো  বা কাদম্বরীর স্কেচ।  তাই কোন সন্দেহ নেই যে  কবি নষ্ঠনীড়ের গল্পের মাধ্যমে কাদম্বরীর কথা, তার স্বামীর কথা এবং নিজের কথাই বলেছেন, তবে অন্য নামে।  "The manuscript Ray saw, moreover, had a sketch of Kadambari Devi in profile, Ray told Robinson. It convinced Ray that Tagore's sister-in-law was on his mind as he wrote his story "The Fouled Nest." 

Marie Seton in her above named book, at one place adds parenthetically that Bengal believed the sister-in-law "committed suicide following 'Rabi's' marriage." লেখিকা Marie Seton এখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে  উল্লেখ করছেন যে সবার বিশ্বাস কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার কারন রবি'র বিয়ে।
এর কোন প্রমান নেই , তবে সবদিক ভেবে দেখলে আপাতঃ দৃস্টিতে তাই মনে হয় । কারন বাস্তবে হয়তো কাদম্বরী দেবী রবি বিয়ে করুক তা চাননি তাই  তিনি যশোরে রবীন্দ্রনাথের জন্য  উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে পাননি। এই অবস্থায় হটাৎ রবির বিয়ে হয়ে গেল এক ১১ বছরের অশিক্ষিত ভবতারিনী নাম্নী মেয়ের সাথে। বিয়ের চারমাস কয়েকদিন পরেই কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন।
 রবির হটাৎ বিয়ের কারন জানা নেই। যে কারনেই হোক , হটাৎ করেই রবির বিয়ের ব্যবস্থা হয়। কিছু  ঘটনা বা সম্পর্কের সুত্রপাত পরিবারের গুরুজনেরা বুঝতে পারেন এবং তড়িঘড়ি রবির বিয়ের ব্যবস্থা  হয় । কাদম্বরী  মৃনালিনির সাথে রবির বিয়ে হোক তা চান নি । তিনি গোপনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু  কিছু ফল হয়নি । একদিন রবির বিয়ে হয়ে গেল। তাঁর সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয়জন হটাৎ এক এগারো বছর  বয়সী মেয়ের হয়ে গেল, এটা  কাদম্বরী কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। এই অবস্থায় কোন উপায়ন্তর না দেখে কাদম্বরী মৃত্যুকেই বরন করে  নিলেন ।


সত্যজিত রায়ের  "চারুলতা"  সিনেমায় অমলের ভুমিকায় সৌমিত্র  ও চারুলতার ভুমিকায় মাধবি। গানটি গেয়েছেন কিশোর কুমার।

সৌজন্যে
http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pClinton1.html
http://en.wikipedia.org/wiki/Jyotirindranath_Tagore
www.youtube.com

একটি কৃষ্ণচুড়া গাছ ও একটি বিজ্ঞাপন

পলাশ ফুল
প্রকৃতিতে পলাশ ফুলের এই শোভা বর্ধন বসন্ত ঋতুর আগমনের ইঙ্গিত বহন করে। পলাশ ,শিমুল,কৃষ্ণচুড়া , রাধাচুড়া প্রকৃতিকে রাঙ্গিয়ে দিয়ে বসন্তের বারতা ছড়িয়ে দেয় । আমাদের মত আর কোন রাজ্যে ছয়টি ঋতুর উপস্থিতি এত ভালভাবে বোঝা যায় না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংর কারনে যদিও ঋতু গুলি অনেকটাই  ওলট পালোট হয়েছে কিন্তু এইবছরের প্রলম্বিত শীতের পর, বসন্তের আগমন বেশ বোজা যাচ্ছে। প্রকৃতিও তার সব সম্ভার দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে এই বসন্তে। তার আগমনি কোকিল সারাদিন কুহু কুহু রবে জানিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই কংক্রীটের জঙ্গলেও প্রকৃতি তার পলাশ ও শিমুল দিয়ে দিকে দিকে আগুনের রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে।

প্রকৃতির এই রঙের খেলায়  একটি স্মৃতি আমার মনে উঁকি দিচ্ছে । আমার বাড়ির সামনে একটা কৃষ্ণচুড়া গাছ এমনি করেই প্রতিবছর বসন্তে নিজেকে সাজিয়ে তুলতো। সারা অঙ্গে আগুন দিয়ে সাজিয়ে শাখা প্রশাখা আন্দোলিত করে হয়ত আমায় তার অঙ্গের রুপ  আমাকে দেখিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করত। কিন্তু আমাদের এই শহরের সংস্কৃতিতে তার এই  সৌন্দর্যের কোন মুল্য নেই। পুরসভার লোকেরা একটু একটু করে TRIM করার নামে, তাকে প্রায় 'খুন' করে ফেলল। এই পুর্নবয়স্ক পুর্নযৌবনা গাছটির একটাই আপরাধ ছিল, সে পুরসভার একটি বিজ্ঞাপন আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই বিজ্ঞাপনটি দৃশ্যগোচরে আনার জন্য  তার অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো নির্দয়ভাবে ছেঁটে  ফেলা হল। সেই থেকে সে জীবন্মৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। 

প্রকৃতির নিয়মে সে মনের আনন্দে বসন্ত কালে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে শভা বর্ধন করত এবং ছায়াদিয়ে ঘিরে রাখত  অনেকখানি  জায়গা।  সেই ছায়াতে পথ চলতি অনেকেই বিশ্রাম  নিত এবং  কিছু  মটোর গাড়ী  তার ছায়ায় রাখা যেত। তাছাড়াও সে বীনা স্বার্থে বাতাসের কার্বন ডাইওক্সাইড শুষে নিয়ে ,বিশুদ্ধ  অক্সিজেন দিয়ে আমাদের সাহায্য করত।  এই উপকারী গাছটিকে বিনা অপরাধে পুরসভা  মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। তার অঙ্গপ্রতঙ্গ ছেঁটে যৌবনেই বার্ধক্যে  পৌছে দিয়েছে। এখন আর ফুল ফোটে না, সে রুপও নেই। কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে। সে আর ছায়া দিতে পারে না। যৌবনে তার রুপ দেখেছি, তাই এখন তাকে  দেখলে  কষ্ট হয়, মায়া হয়।  জীবন আছে কিন্তু কথা বলতে পারে না। এদের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। আজ যখন সারা বিশ্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিংর জন্য সবুজায়নের জন্য এবং Deforestation'র বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে তখন আমাদের বিধান নগর  ও কলকাতার পুরসভা গুলি বীপরীত মুখে হাঁটছে। এঁরা বিজ্ঞাপন দাতাদের বৃক্ষনিধনের পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়ে বসেছেন।  সল্টলেকের ব্রডওয়ের দু পাসে এবং মাঝখানের সারিতে প্রচুর বড় বড় গাছ নীধন করা হয়েছে। তার চিহ্ন  মাটিতে এখনো বর্তমান।

এককালে গাছগলো পুরসভাই লাগিয়েছিল রাস্তার শোভা বর্ধন এবং সবুজায়নের জন্য। সেই পুরসভাই  দুটো পয়সার জন্য আজ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে নষ্ট করে চলেছে।  
 
সেই কৃষ্ণচুড়া গাছ, তার বাঁ পাশে রাধাচুড়া এবং ডানপাশে লাইটপোষ্টে লটকানো বিজ্ঞাপনটি। এই ছট্টো বিজ্ঞাপনটি আড়াল করাটাই তার ছিল আপরাধ। ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে কি নিষ্ঠূরভাবে তার অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

গায়ত্রী দেবী

 
Gayatri Devi
গায়ত্রী দেবী ছিলেন ভারতীয় সৌন্দ্যর্যর মুর্ত প্রতীক। পাঁচের দশকে "VOGUE" পত্রিকার সেরা দশ সুন্দরীর তিনি ছিলেন একজন। কিছুদিন আগে ৯০ বছর বয়েসে মারা যান, কুচবিহারের রাজপরিবারের মেয়ে ও জয়পুরের  রাজমাতা গায়ত্রি দেবী । তাঁর জন্ম লন্ডনে এবং পাড়াশোনা শান্তিনিকেতনে ও সুইজারলান্ডে । জয়পুরের রাজা সোয়াই মান সিংহের তৃতীয় স্ত্রী রাজপরিবারের রক্ষনশীল রীতিনীতি ভেঙ্গে মুক্ত বাতাস এনেছিলেন।

প্রেমের একাল সেকাল

গত এক দশকে যোগাযোগ বিজ্ঞানে (ইনফর্মেশন  TECHNOLOGY বা কম্যুনিকেশনে ) বিপ্লব ঘটে গেছে।  প্রেমের সঙ্গে যোগাযোগ বা কম্যুনিকেশন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।  প্রেম পীড়ীত দুটি হৃদয় কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। তাই প্রেমের ক্ষেত্রে যোগাযোগ একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। কম্যুনিকেশনের বিপ্লবের সাথে সাথে তাই প্রেমের  রূপ ও চরিত্র পালটে গেছে । এই MOBILE, INTERNET'র  যুগে  কাছে না পাওয়ার, চোখে না দেখার সেই বিরহের সুখ বা দুঃখ, বেদনা আজকের প্রেমে নেই।  

সেকালে যোগাযোগ একটা বিরাট সমস্যা ছিল।  ইচ্ছামত যখন তখন যোগাযোগ করা যেত না, দেখা করা তো দূরস্থান। কারন তখন সামাজিক বা পারিবারিক বাধানিষেধ ছিল অত্যন্ত বেশি । রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে হলে তো  অবস্থা আরো কঠীন হত। তখন মেয়েরাও এখনকার মত এতোটা স্বাধীন বা স্বাধীনচেতা ছিল না। এমত অবস্থায়  প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হত পাড়ার পরিচিত ঘনিষ্ঠ কোন COMMON বৌদি বা বৌদিদের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় পাড়ার বৌদিরা  একটা গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতেন। তারা সেটা নিস্বার্থভাবে পালন করে দুই জনকে সাহায্য করতেন।  সেটা সব সফল  অসফল প্রেমের ক্ষেত্রেই দেখা যেত। অনেক সময় বৌদিদের বাড়িতে (দাদার অনুপস্থিতে) দুজনের সাক্ষাৎ হত এবং  সাক্ষাতে দুজনের তৃষিত হৃদয় জুড়াত। 

অনেক সময় বৌদির অভাবে অগত্যা প্রেমিকার মেয়ে বন্ধুর সাহায্যেও প্রেম-পত্রের আদানপ্রদান হত। এটা একটা বিপদজনক রাস্তা। কিন্তু কথায় বলে প্রেম বিপদ বোঝে না। ঊপায় না থাকলে সে বিপদে ভয় পায় না। একটা চিঠির জন্য তখন কি না করত। আজকাল সেসব কল্পনাও করতে পারবে না । কারন আজকাল আর তার প্রয়োজন হয় না। প্রেমপত্র জিনিসটা কি তাই বা কয়জন জানে। প্রেম পত্রের স্বাদ পাওয়া অনেক দুরের কথা।  প্রেম পত্র লেখার সময় অনেক ভাষার  প্রয়োগ হত যা আজকের  SMS, EMAIL 'র ভাষায় সবই হারিয়ে গেছে। একটি পত্রের আশায় আশায় দিনের পর দিন কেটে যেত। চিঠি পেতে দেরি হলে কত অভিজ়োগ  আনুজোগ মান  অভিমান ভরা থাকতো পরের  চিঠিতে। এখন সে সব কোথায় ? এখন শুধু একটি বোতাম টেপার  অপেক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে দুজনে কানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। টেকণোলোজী আমাদের  দুরত্ত্ব কমিয়েছে এবং সেইসঙ্গে আমাদের সুক্ষ  অনুভুতিগুলোকে মুছে দিয়েছে। এই টেক্‌ণোলোজী আমাদের অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। এখন সব কিছুই এত সহজলভ্য যে তা পাওয়ার বা জানার যে আকুলতা বা বেদনা তা এখন অনুভুত হয় না বা অনুভব করার প্রয়োজন হয়  না।  প্রেমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন  বিরহ বলে কিছু নেই। বিরহের মধ্যে যে সুখ তা হারিয়ে গেছে। INTERNET, MOBILE 'র দৌলতে প্রেমের রুপ পালটে গেছে।  

আমরা উত্তম সুচিত্রা জুটির সিনেমা দেখে  অনুপ্রানিত হোতাম। পর্দায় উত্তম সুচিত্রার নির্মল প্রেম দেখে তখন প্রেমের পাঠ শুরু হত। সেগুলো তখন হৃদয় দিয়ে অনুভব করতাম এবং তরুন মনের কোনে রেখাপাত করতো। সমাজ বা পরিবার তখন এখনকার মত এতোটা উদার ছিল না , তাই  তখন প্রেমে বাধা বিপত্তি  অসুবিধা সবসময় থাকতো । এইসব কারনে দুজনের মধ্যে  সবসময় একটা  দুরত্ত্ব  থাকতো  এবং এই দুরত্বের কারনেই তখন প্রেমে গভীরতা ছিল । যা সহজে পাওয়া যায়না তা  পেলে সততই  মধুর হয়। তাই  সেদিনের সেই প্রেম ছিল মধুর এবং দীর্ঘস্থায়ী। 



উত্তম সুচিত্রা, ছবি - অগ্নীপরিক্ষা, "কে তুমি আমারে ডাকো"

বাংলা ভাষা

Bengali or Bangla (বাংলা ) একটি  Indo-Aryan ভাষা, যার উৎপত্তি সংস্কৃত ভাষা থেকে । বাংলা ভাষীর সঙ্খ্যা ২৩০ মিলিয়ন বা তারো বেশী । বিশ্বের সাবচেয়ে বেশি কথিত ভাষা। বাংলাদেশ , যার লোক সঙ্খ্যা ১২০+ মিলিয়ন, সকলেই বাংলায় কথা বলে। ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের জনসঙ্খ্যা ৮০+ (২০০১ জনগননা) মিলিয়ন, সকলেই বাংলাভাষী। এছাড়া ভারতের  এবং  বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রচুর বাংলা ভাষী আছেন, যারা বাংলায় কথা বলতে ভালবাসেন। বাস্তবে বাংলাভাষীর সঙ্খ্যা আমাদের আনুমানের  অনেক বেশী । এটা জেনে খুব ভাল লাগে।

কিন্তু দুঃক্ষ হয় যখন দেখি বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা বাঙ্গলা নিয়ে চর্চা করতে খুব একটা আগ্রহী নয় কারন এখন সবাই carrier Oriented course নিয়ে পড়াশুনা করতেই বেশি আগ্রহ। আজকাল কয়জন বাংলা নিয়ে উচ্চাশিক্ষা লাভ করে, তা হয়ত হাতে গোনা যাবে। বাংলা স্কুলে বা বাংলা নিয়ে উচ্চশিক্ষা এখন Last priority. এটা পশ্চিম বঙ্গের ছবি। বাংলাদেশে হয়ত এতটা নয় কারন সেখানে বাংলা জাতীয় ভাষা।

বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের বাঙ্গলা নিয়ে বিলাসিতা করার সময় নেই কিন্তু তার জন্য তারা বাংলা সাহিত্যের অমুল্য মনি মানিক্যের স্বাদ থেকে ছিরবঞ্চিত। তারা কোনোদিন রবিন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম সাহিত্যের স্বাদ পাবে না। বাঙ্গালীর ঘরে বাঙ্গালী হয়ে জন্মে বাংলা সাহিত্যের স্বাদ নিতে  অপারগ। এটা ভাবলে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। সময়টাই এরকম। এখন MBA এবং ENGINEERING এর চাপে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ও ভাষায় উচ্চশিক্ষার হার আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। এইভাবে চললে ভবিষ্যতে বাংলা ভাষীর সঙ্খ্যা কমে আসবে তাহাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাভাষীর আজকের সঙ্খ্যাটাই আমার এই ব্লগ লেখার কারন । তাছাড়া নিজের ভাষা যতো সহজে  প্রকাশ করা যায়, অন্যা ভাষায় তা হয় না। হয়ত আমার এই ব্লগ  কেও  পড়বে না , পড়বার উপযুক্তও হয়ত হবে না কারন আমি কনো  লেখক বা কবি নই। আমি আপনাদেরই মতো একজন।
 

একটি শিশির বিন্দু

আমার ভালোলাগা একটা কবিতা -
" বহু দিন ধ'রে বহু  ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বত মালা,
দেখিতে গিয়েছি  সীন্ধূ ।
দেখা হয় নাই চক্ষূ মেলিয়া
ঘর হতে শুধূ দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু ।।"
(  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  রচিত )